রাজিবপুরে চালক হত্যা মামলার দুইজন আসামি গ্রেফতার
কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুরে ইজিবাইক ছিনিয়ে নিয়ে মোঃ এনামুল হক (৫০) নামের একজন চালক হত্যার ঘটনায় আবু হানিফ (৬৮) এবং ফারুক শেখ (৫৫) নামের দুইজন আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া ছিনতাইকৃত ইজিবাইকটিও উদ্ধার করেছে পুলিশ।
ঘটনার ১৬ দিন পর আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে রাজিবপুরথানা পুলিশের একটি চৌকস দল বুধবার নরসিংদী ও টঙ্গী স্টেশন রোড থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার বিষ্ণুপুর স্বর্ণকারপাড়া এলাকার মৃত শুক্কুর মুন্সির ছেলে আবু হানিফ এবং রাজবাড়ী জেলা সদরের গঙ্গাপ্রাসাদপুর এলাকার মৃত রিয়াজ শেখের ছেলে ফারুক শেখ।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজিবপুর থানার ওসি মোঃ আশিকুর রহমান এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে জানান, ইজিবাইক ছিনিয়ে নিয়ে চালক এনামুল হক হত্যাকান্ডের ঘটনায় রৌমারী এবং রাজিবপুর সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টের সিসিটিভি ফুটেজ নিবিড় পর্যালোচনা করা হয়। ইজিবাইকে থাকা দুইজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির ছবি সংগ্রহ করা হয়। এরপর তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সনাক্তকরণসহ অবস্থান নিরুপণ করে জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, নরসিংদী এবং রাজবাড়ী জেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে রাজিবপুর থানা পুলিশ।
অবশেষে মরদেহ উদ্ধারের ১৬ দিন পর গতকাল বুধবার নরসিংদী থেকে আবু হনিফ এবং টঙ্গী স্টেশন রোড থেকে ফারুক শেখকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের স্বীকারোক্তিতে ছিনতাই হওয়া ইজিবাইক দেওয়ানগঞ্জ থেকে উদ্ধার করা হয়। তিনি আরও জানান, গ্রেফতার হওয়া আসামিদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় ছিনতাই চুরিসহ চেতনাশক বিষ প্রয়োগের অসংখ্য মামলা রয়েছে। এছাড়া আন্তজেলা ইজিবাইক ছিনতাই চক্রের সক্রিয় সদস্য তারা। গ্রেফতারের পরই নিহতের পরিবার ছুটে আসেন রাজিবপুর থানায়।
নিহতের স্ত্রী মামলার বাদী মোছাঃ আয়েশা সিদ্দিকা জানায়, আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই। আসামিদের ফাঁসি চাই। আমার স্বামী মরে যাওয়ার পরে আমার পরিবার অন্ধকারে দিনপাত করছে। আমার স্বামী একমাত্র উপার্জন ক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। এখন আমি কি করে সংসার চালাবো আমার ছেলে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে। কিভাবে পরিবার চালাই আমি কিছুই বুঝতেছি না।
নিহতের একমাত্র ছেলে ৮ম শ্রেণির ছাত্র মোঃ আহসান হাবিব বলেন, আমার বাবার হত্যাকারীদের এত দ্রুত সময়ে মধ্যে রাজিবপুর থানা পুলিশ গ্রেফতার করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই। আর সেই সঙ্গে হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। আমার বাবা আমাদের পরিবারে উপার্জন করে আমাদের ভরণ পোষণ করত। এখন আমার বাবাকে হত্যা করার পরে আমার পরিবারটা কষ্টে চলতেছে কিভাবে সংসার চলে কি করি না করি আমরা কিছুই বুঝতে পারতেছি না। সরকার যেন আমাদের পরিবারের কোনোভাবে আর্থিক সহযোগিতা করে আমি যেন ভালোভাবে পড়ালেখা করতে পারি।
প্রসঙ্গত, গত ২৯ জানুয়ারি (সোমবার) সকাল ৮টার দিকে রৌমারী সদর ইউনিয়নের মধ্য ইছাকুড়ি এলাকার নিজ বাড়ি হতে ইজিবাইক নিয়ে ভাড়া খাটতে বের হন চালক এনামুল হক। ওইদিন রাতে ফেরার কথা থাকলেও বাড়িতে আর ফিরেননি। পরে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পাননি স্বজনরা। পরে ৩০ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রাজিবপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের ধুলাউড়ি স্লুইসগেট নামক এলাকার একটি ধান ক্ষেতে ওই চালকের মরদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। খবর পেয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের দল। এই ঘটনায় ওইদিনে রাজিবপুর থানায় একটি অজ্ঞাতনামা হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের স্ত্রী মোছাঃ আয়েশা খাতুন। নিহত চালক এনামুল রৌমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের মধ্য ইছাকুড়ি এলাকার মিছির আলীর ছেলে।