তিস্তার ৪৪ টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে
অসহনীয় গরমের পর দুইদিন ধরে টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে রংপুরে। রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় অঝরে ঝরছে বৃষ্টি। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দিনভর টানা মাঝারি ধরনের বর্ষণ হয়েছে।
এর মধ্যে শুধু রংপুরেই গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া শাখার উপ-প্রকৌশলী মোঃ রাশেদীন বলেন, অব্যাহত বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। পানির চাপ সামলাতে তিস্তার ৪৪ টি গেট খোলা রাখা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, আজ শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ও শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুইদিন পর্যন্ত রংপুর বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতা আছে। এর ফলে তিস্তা, ধরলা এবং দুধকুমার নদীর পানি সমতল আগামী দুইদিন পর্যন্ত দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে ও পরবর্তী একদিন পর্যন্ত নদীগুলোর পানি সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে।
এছাড়া আগামী দুইদিন পর্যন্ত লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর এবং কুড়িগ্রাম জেলার তিস্তা নদীর পানি সমতল সতর্ক-সীমায় প্রবাহিত হতে পারে। এসব জেলার নদী তীরবর্তী চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। অপরদিকে আগামী ৩ দিন পর্যন্ত কুড়িগ্রাম জেলার ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি সমতল বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
এদিকে হালকা থেকে মাঝারি, আবার কোথাও ভারী বর্ষণে দুই দিন ধরে রংপুর অঞ্চলের নদ-নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। রংপুর বিভাগের তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরদিকে দুধকুমার নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে। এসব নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অন্যদিকে রংপুর বিভাগের ব্রহ্মপুত্র নদ এবং তার ভাটিতে যমুনা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে এবং বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং পরবর্তী ৪ দিন পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) রংপুরের উপ-সহকারী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আজ শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে সকাল ৯টায় পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১.৭৬ সেন্টিমিটার। যা (স্বাভাবিক ৫২.১৫ সেন্টিমিটার) বিপৎসীমার দশমিক ৩৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সকাল ৬টায় একই পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়।
এদিন সকাল ৯টায় তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ২৮.৭৫ সেন্টিমিটার। যা (স্বাভাবিক ২৯.৩১ সেন্টিমিটার) বিপৎসীমার দশমিক ৫৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে সকাল ৬টায় বিপৎসীমার দশমিক ৬১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়।
এছাড়াও সকাল ৯টার দিকে কুড়িগ্রামের ব্রক্ষ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে ২০.০৪ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ২৩.২৫ সেন্টিমিটার), দুধকুমার নদের পাটেশ্বরী পয়েন্টে ২৬.৬৪ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ২৯.৬০ সেন্টিমিটার), ধরলা নদীর কুড়িগ্রাম পয়েন্টে ২২.৯০ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ২৬.০৫ সেন্টিমিটার), গাইবান্ধার যমুনা নদীর ফুলছড়ি পয়েন্টে ১৫.২৬ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ১৯ দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার), ঘাঘট নদের গাইবান্ধা পয়েন্টে ১৭.৩৫ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ২১.২৫ সেন্টিমিটার) পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে। সূত্র বলছে, রংপুর বিভাগের কোনো নদ-নদীতে বিপৎসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে না।
এদিকে প্রতিদিনের বৃষ্টিপাত আর উজানের ঢলে পানি বৃদ্ধির ফলে রংপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার সব নদ-নদীর পানির পাশাপাশি বিলের পানি বৃদ্ধিও অব্যাহত আছে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। সেই সঙ্গে ফসলি জমিতে পানি ওঠায় নষ্ট হচ্ছে আগাম শীতকালীন শাকসবজি ও বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসল।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আবহাওয়াবিদ মোঃ মোস্তাফিজার রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর জেলায় ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আজ শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রংপুর বিভাগসহ দেশের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের ভারী বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে রংপুরের কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।