তিস্তার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে
উজান থেকে নেমে আসা ঢলে রংপুরের প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা পার করেছে। এতে নদ-নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় কাউনিয়া এবং ডালিয়া পয়েন্টে ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আজ সোমবার দুপুর ১২টা থেকে তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সকাল ৯টায় বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার এবং সকাল ৬টায় ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমা ২৮.৭৫ সেন্টিমিটার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রংপুর জেলার কাউনিয়া, পীরগাছা এবং গঙ্গাচড়া উপজেলার নিম্নাঞ্চলসহ চরের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে বিভিন্ন এলাকা। চরাঞ্চলের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। সেই সাথে তলিয়ে গেছে গ্রামীণ সড়ক। ডুবে গেছে ওইসব এলাকার সবজি ক্ষেত।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেয়ায় ভাঙনকবলিত পরিবারের অনেকে তাদের বাড়ি-ঘর সরিয়ে নিচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অনুরোধ করেছে পরিবারগুলো।
গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের চিলাখাল সূর্যমূখী ক্বারী মাদরাসা, চিলাখাল মধ্যপাড়া জামে মসজিদ, উত্তর চিলাখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনের মুখে পড়েছে। এছাড়াও কোলকোন্দ ও লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি এ পানি প্রবেশ করেছে।
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ তামান্না জানান, তিস্তা নদী এলাকায় বন্যা ও ভাঙনের বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখছি। কোথাও কোন সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ মোঃ নজরুল ইসলাম হক্কানি জানায়, অসময়ের বন্যা ও ভাঙনে প্রতিবছর এক লক্ষ কোটি টাকার সম্পদ তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য তিস্তা খনন, সংরক্ষণ এবং তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই।
রংপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রবিউল ইসলাম জানান, গত কয়েক দিনের তুলনায় আজ সোমবার কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ডালিয়া ব্যারাজের সব গেট খুলে দেওয়া হয়েছে।
রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মোঃ জাকির হোসেন জানান, উজানে ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ঘাঘট, ধরলা, করতোয়া, ব্রহ্মপুত্রসহ সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারিভাবে সব ধরনের আগাম প্রস্তুতি নেয়া আছে, যেন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কেউ না হয়। প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে সার্বক্ষণিক নদীপাড়ের পরিস্থিতির খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে।