January 26, 2025
এ দায় আমাদের, ক্ষমা করো আবু সাঈদ: মানববন্ধনে বেরোবির শিক্ষকেরা

এ দায় আমাদের, ক্ষমা করো আবু সাঈদ: মানববন্ধনে বেরোবির শিক্ষকেরা

Read Time:5 Minute, 56 Second

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নিহত আবু সাঈদের হত্যার বিচারের দাবিতে ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকদের একাংশ।

আজ বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুর ১২টায় এই কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। এই সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের কয়েকজন শিক্ষকদের ঘিরে ও আবু সাঈদ হত্যার জন্য শিক্ষকদের দায়ী করে।

এরপর শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় গেটে যেখানে গুলিবিদ্ধ হয় আবু সাঈদ সেখানে মানববন্ধন করেন শিক্ষকেরা। এই সময় শিক্ষকেরা বিভিন্ন লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড হাতে নেন। প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘এ মৃত্যুর দায় আমাদের’, ‘আমাদের সন্তানের রক্তে ক্যাম্পাস রঞ্জিত’, ‘এই দায় আমাদেরও, ক্ষমা করো আবু সাঈদ।’

এই সময় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক মোঃ সানজীদ ইসলাম খান বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের জানান, আমরা শিক্ষক হিসেবে ব্যর্থ। আমাদের ক্ষমা করো। আমাদের হাত ধুইলে এখনো তোমাদের রক্ত বের হবে। মুখে থুতু দিয়ে যাও। পুরো ক্যাম্পাস থুতু নিয়ে ঘুরে বেড়াব। আমাদের লজ্জা নাই বাবা। আবু সাঈদকে ছাত্র বলার মতো যোগ্যতা আমাদের হয় নাই।

গুলিবিদ্ধ স্থান দেখিয়ে শিক্ষকেরা জানান, আবু সাঈদ নিরস্ত্র ছাত্র, সে হাত উঁচিয়ে গুলি করতে বারবার বাধা দিয়েছিল। তবুও তাঁকে গুলি করা হয়। এটি পরিকল্পিত একটি ঘটনা। ঠান্ডা মাথায় আমাদের ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের সাথে যারা জড়িত, তাদের প্রত্যেকেই আইনের আওতায় আনতে হবে। বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে আবু সাঈদ হত্যার বিচার করতে হবে।

বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ জানান, সারা দেশের শিক্ষক সমাজ যদি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করত তাহলে দেশ আজ এই অবস্থায় যেত না। শিক্ষকেরা যখন মাথা নিচু করে চলতে শুরু করেছে, শিক্ষার্থীরা তখন পথ দেখিয়েছে। পুলিশ যেভাবে গুলি করেছে তাতে দেখতে হবে সরকারের নির্দেশ ছিল কি না যাকে পাও গুলি করবা। যদি এটা না হয় তাহলে দেখতে হবে পুলিশ কেন অতি উৎসাহী হয়ে গুলি করেছে? আমরা এর বিচার চাই। আমি শিক্ষকদের বলব আপনারা মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়ান। তাহলে জাতির মেরুদণ্ড সোজা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ড. মোঃ মতিউর রহমান বলেন, ‘একটি পাখিকেও একজন মানুষ এভাবে গুলি করে না যেভাবে গুলি করে শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে হত্যা করা হয়েছে। আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’

উল্লেখ, আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। বেরোবির কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন তিনি। এই জন্য সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয় আবু সাঈদ। গতকাল মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুর ২টার দিকে শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত মিছিল বেরোবির ২য় গেটে পৌঁছালে সেখানে পুলিশ ক্যাম্পাসে ঢুকতে বাধা দেয়। এর একপর্যায়ে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে। এই সময় পুলিশ-ছাত্রলীগ আন্দোলনকারীদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ বাঁধে।

এ সময় শিক্ষার্থীরা কিছুটা পিছু হটলে আবু সাঈদ সামনে দাঁড়িয়ে থাকে এবং গুলিবিদ্ধ হয়। সহপাঠীরা তাঁকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকেরা জানান তিনি হাসপাতালে পৌঁছানোর আগে মারা যান।

আজ বুধবার (১৭ জুলাই) সকাল রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বামনপুর গ্রামের বাড়িতে আবু সাঈদের লাশ দাফন করে হয়। সেখানে তাঁর জানাজায় মানুষের ঢল নামে। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে তাঁর মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। এই সময় হাজারো মানুষ আবু সাঈদের লাশ দেখার জন্য তাঁর বাড়িতে অপেক্ষায় ছিলেন। মরদেহ গ্রামে পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
কোটা আন্দোলনে মৃত্যুবরণকারী শিক্ষার্থীদের গায়েবানা জানাজা Previous post কোটা আন্দোলনে মৃত্যুবরণকারী শিক্ষার্থীদের গায়েবানা জানাজা
ঘোড়াঘাটে কবরস্থান থেকে কঙ্কাল চুরির ঘটনায় ৩ জন গ্রেপ্তার Next post ঘোড়াঘাটে কবরস্থান থেকে কঙ্কাল চুরির ঘটনায় ৩ জন গ্রেপ্তার