
নিজ ভাইকে জীবিত মাটিতে পুঁতে হত্যা র্যাবের হাতে ১ জন গ্রেফতার
গত ১৪ জুলাই ২০২২ কোমল পানীয় এবং জুসের সাথে চেতনানাশক সেবন করিয়ে সৎভাইকে জীবিত অবস্থায় বাঁশ ঝাড়ের মধ্যে মাটি খুঁড়ে পুঁতে রেখে হত্যা মামলার এক জন পলাতক আসামীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৩ রংপুর। ঘটনাটি ঘটেছে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার পশ্চিম রামদেব গ্রামে।
ভিকটিম মোঃ আলমগীর হোসেন (৪৫)কে তার সৎভাই জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধীতার জের ধরে কোমল পানীয় ও জুসের সাথে চেতনানাশক সেবন করিয়ে হত্যা করে। ওই ঘটনাটি জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমসমূহে প্রচারিত হলে এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ঘটনাটির পর খুনিরা বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করে।
এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে র্যাব-১৩ এর অধিনায়কের পক্ষে সহকারী পরিচালক মিডিয়া ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মোঃ মাহমুদ বশির আহমেদ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মোঃ আলমগীর হোসেনের মায়ের জমি ভোগ করে আসছিল তার সৎভাই খেলান উদ্দিন ও আবদুস সাত্তার। এই নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল।
এক বছর আগে তার সৎভাইদের সাথে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়েছিল মোঃ আলমগীর হোসেন। বিষয়টির কোনো কুলকিনারা পাচ্ছিল না পুলিশ। অবশেষে পাবনায় বসবাসকারী মোঃ আবদুল সাত্তারের ভায়রা আবদুল আজিজ মুঠোফোনে আলমগীরের সহোদর মোঃ সাদ্দাম হোসেনকে প্রকৃত ঘটনা জানিয়ে দিলে ঘটনার জট খুলে যায়।
১৩ জুলাই ২০২২ তারিখে আদিতমারী উপজেলার পশ্চিম রামদেব গ্রামে তার সৎ ভাই আবদুস সাত্তারের ভায়রা আবদুল আজিজ রাশেদুল ড্রাইভার এবং ঐ গ্রামের বাসিন্দা মোঃ আশরাফ আলী এবং সেকেন্দার আলীর সহযোগিতায় ১টি নির্জন বাড়িতে মোঃ আলমগীর হোসেনকে ডেকে নিয়ে কৌশলে কোমল পানীয়র সাথে চেতনানাশক মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। আলমগীর হোসেন অচেতন হয়ে গেলে তারা জীবিত অবস্থায় বাঁশ ঝাড়ের মধ্যে পুঁতে রাখে। আলমগীরের পরিবারের পক্ষ ১৪ জুলাই ২০২২ কালিগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়।
এরই মধ্যে ভিকটিমের সৎভাই খেলান উদ্দিন এবং আবদুস সাত্তার মর্ত্যুবরণ করে।
আবদুল আজিজ মুঠোফোনে মোঃ সাদ্দাম হোসেনকে প্রকৃত ঘটনা জানিয়ে দিলে সাদ্দাম হোসেন গত ১০ জুলাই ২০২৩ তারিখে বাদী হয়ে লালমনিরহাট জেলার কালিগঞ্জ থানায় এজাহার দায়ের করেন। যার মামলা নাম্বার ছিল- ০৭.২১১, তারিখ- ১০.০৭.২০২৩, ধারা- ৩৬৪.১১৪ পেনাল কোড। এরপর গত বুধবার ট্রাকচালক মোঃ আবদুল আজিজকে রংপুর সদরের মাহীগঞ্জ হতে গ্রেফতার করে পুলিশ। একই সাথে রামদেব গ্রামের মোঃ আশরাফ আলী এবং মোঃ সেকেন্দার আলীকে গ্রেফতার করা হয়। এই ঘটনায় কালিগঞ্জ থানা পুলিশ কঙ্কাল উদ্ধার করে।
এরই প্রেক্ষিতে র্যাব-১৩ ব্যাটালিয়ন সদর উক্ত চাঞ্চল্যকর ঘটনার বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারী শুরু করে। এক পর্যায়ে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ১৫ আগস্ট ২০২৩ গাজীপুর জেলার টুঙ্গী থানা এলাকায় র্যাব-১ সিপিসি-১ উত্তরা ঢাকা ও র্যাব-১৩ ব্যাটালিয়ন সদর রংপুর যৌথ অভিযান চালিয়ে চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস হত্যা মামলার একজন আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকৃত আসামী লালমনিরহাট জেলার কালিগঞ্জ থানাধীন রুদ্রেশ্বর গ্রামের মৃত জহর উদ্দিনের পুত্র মোঃ আদম আলী (৫৮)।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে, আসামী অন্যান্য আসামীদের সহায়তায় সে দিন পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ভিকটিমকে জুসের সঙ্গে চেতনানাশক সেবন করিয়ে জীবিত অবস্থায় বাঁশঝাড়ের মধ্যে মাটিতে পুঁতে রেখে হত্যা করে বলে স্বীকার করেছে। অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারের জন্য র্যাব-১৩ গোয়েন্দা নজরদারি চালাচ্ছে। আটককৃত আসামীকে কালিগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।