March 29, 2024
সৌন্দর্যের অপরুপ আমাদের রংপুরের জমিদার বাড়ি

সৌন্দর্যের অপরুপ আমাদের রংপুরের জমিদার বাড়ি

Read Time:10 Minute, 51 Second

সৃষ্টির আদিকাল থেকেই মানুষ ভ্রমণের প্রতি একটা আলাদা নেশা। একটু সুযোগ পেলেই আমরা বাঙালীরা ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ে। আমাদের আশেপাশে বেড়ানোর দর্শনীয় অনেক স্থান রয়েছে! তেমনই রংপুরের অবস্থিত ঐতিহাসিক স্থাপনা তাজহাট জমিদার বাড়ি। চাইলে আপনারাও ঐতিহ্যবাহী এ স্থান থেকেও ঘুরে আসতে পারেন।

বাংলাদেশের বিভাগীয় শহর রংপুরে তাজহাটে অবস্থিত তাজহাট জমিদার ঐতিহাসিক প্রাসাদ যা বর্তমানে ১টি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। রংপুরের পর্যটকদের কাছে এটি একটি আকর্ষণীয় স্থানের মধ্যে একটি।

এটি তাজহাট রাজবাড়ি নামেও বহুল পরিচিত। রংপুর শহর থেকে তিন কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে তাজহাট জমিদার বাড়ি অবস্থিত। এ প্রাসাদের ১টি অংশ বর্তমানে রংপুর জাদুঘর করা হয়েছে।

পটভূমি

তাজহাট জমিদার মূলতঃ গোবিন্দ লালের পুত্র গোপাল লাল এর সঙ্গে সর্ম্পকযুক্ত যা স্থানীয়ভাবে তাজহাট জমিদার নামে পরিচিত। এ বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মান্নানলাল রায়। মান্নানলাল রায় পাঞ্চাব হতে রংপুরের বিশেষ সমৃদ্ধ স্থান মাহিগঞ্জে সোনার ব্যবসা করার জন্য এসেছিলেন।

প্রাচীন রঙ্গপুরের ইতিহাস পুস্তক থেকে বিস্তারিত ভাবে যায় যে, মান্নানলাল রায় রঙ্গপুরের মাহিগঞ্জে এসেছিল মূলত হীরা, জহরত ও স্বর্ণ ব্যবসা করার জন্য। প্রথমে মান্নানলাল রায় নানা ধরণের নামী দামী হীরা, মানিক জহরতখচিত তাজ কিংবা টুপির ব্যবসা করেছিলেন । উক্ত মুকুট বা তাজ বিক্রির লক্ষে এখানে হাট বসে যা পরবর্তীতে বিরাট প্রসিদ্ধি লাভ করে এবং এ তাজহাটকে কেন্দ্র করে এই জমিদারবাড়ীর নামকরণ করা হয় তাজহাট জমিদার বাড়ি।

ইতিহাস

১৯৮৪ হতে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত প্রাসাদটি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বেঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ১৯৯৫ সালে প্রাসাদটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করলে তখন থেকে প্রাসাদটি রক্ষণের কাজ শুরু হয়। প্রাসাদের সামান্য কিছু অংশকে ২০০২ সালে জাদুঘর তৈরির প্রস্তাবনা পাশ হয়। পরে ২০০৫ সালে তা বাস্তবায়ন করা হয়।

১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ প্রাসাদটিকে একটি সংরক্ষিত স্থাপনা হিসেবে ঘোষণা করে। বাংলাদেশ সরকার এ স্থাপত্যের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনুধাবন করতঃ ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে রংপুর জাদুঘরকে স্থানান্তর করে এ প্রাসাদের ২য় তলায় নিয়ে আসে।

সৌন্দর্য

তাজহাট জমিদার বাড়িটির উত্তর দক্ষিনের প্রকোষ্ঠটির পূর্ব ও পশ্চিমের অংশের পরিমাপ ১২৩ ফিট১২০ফিট লম্বা। ২য় তলায় ওঠার জন্য ৩টি অভিগমন পথ রয়েছে তন্মধ্যে মধ্যের অভিগমন পথটি অপেক্ষাকৃত প্রশস্ত। সবকটি অভিগমন পথের প্রতিটি ধাপ সুন্দরমসৃণ সাদা ও ছাই রংয়ের পাথর দ্বারা মোড়ানো আছে। বারান্দাটির সম্পূর্ণ মেঝে অনুরূপ পাথরে মোড়ানো ১ম তলার ছাদ নির্মাণে বড় বড় লোহার বীম ও লোহার ফালি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রধান তলার বা গ্রাউন্ড ফ্লোরের অংশটিতে চারটি কক্ষ দেখা যায় এবং এতে সর্বমোট এগারো জোড়া কপাট বিশিষ্ট দরজা দেখা যায় যা এ প্রাসাদের প্রকোষ্ঠগুলোতেও অনুরূপভাবে পূর্বেও অংশে সাত টি প্রবেশ দ্বারা সমন্বিত তিন টি বড় কক্ষ এবং পশ্চিম অংশে জোড়া কপাট বিশিষ্ট দরজাসহ বিরাট হলরুম আছে। এ অংশের প্রায় মধ্যভাগে ১টি প্রবেশ ও বর্হিপথ রয়েছে। প্রধান ইমারতের উত্তর অংশের মাঝামাঝি দ্বিতীয় তলায় ওঠানামার জন্য সুন্দর কাঠের তৈরি বাইশটি ধাপ বিশিষ্ট সিঁড়ি দেখা যায় এবং দক্ষিনের প্রাসাদের প্রকোষ্ঠটিতেও দ্বিতীয় তলায় ওঠানামার জন্য লৌহ নির্মিত নকশাকৃত ঝুলন্ত মজবুত সিঁড়ি আছে। সম্মুখস্থ প্রধান প্রাসাদটির দ্বিতীয় তলায় ওঠানামার জন্য ১টি বিরাট গ্যালারির মতো সিঁড়ি রয়েছে । সিঁড়িটিকে ৩টি স্তরে বিভক্ত দেখা যায়। প্রথম স্তরে প্রথম ধাপ বিরাজমান, দ্বিতীয় স্তরে ওঠার সময় একটু সমান অবস্থান নেমে আবার চৌদ্দটি ধাপ অতিক্রম করে একটি সুন্দর পরিচ্ছন্ন আয়তাকার প্লাটফরমে ওঠা যায়, যা ২য় তলার ছাদের সাথে সম্পৃক্ত ,যাকে ৩য় স্তর হিসেবে ধরা যায়। এ সিঁড়িটির পরিমাপ দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৬ফিট ৩৩ফিটএবং প্রশস্ত উপরের দিকে ৪৯ফিট এবং ক্রমান্বয়ে পরিমাপ কমিয়ে তা ৩৩ফিট পর্যন্ত প্রশস্ত রাখা আছে। সিঁড়িটি ভূমি থেকে ২য় ভবনের ছাদ পর্যন্তসম্পূর্ণ অংশ সুন্দর মসৃন সাদা – কালো পাথরে মোড়ানো এবং সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় এখন ও আছে।

মার্বেল সিঁড়ি দিয়ে উঠলেই জাদুঘর। সেখানে রয়েছে রাজা-বাদশাদের ব্যবহৃত অনেক রকম নিদর্শন। বেগম রোকেয়ার বোন মরিয়মকে দেওয়া চিঠি। আরও রয়েছে পবিত্র কোরআন শরীফ, বিখ্যাত কবি শেখ সাদির ফরাসি কবিতা, সম্রাট আওরঙ্গজেবের খুৎবা, পোড়ামাটির ফলকসহ আরও অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন।

গঠনশৈলী

প্রাসাদটি প্রায় দুইশত ১০ ফুটের মত প্রশস্ত ও ৪ তলার সমান উঁচু। এর গঠনশৈলী প্রাচীন মুঘল স্থাপত্য হতে অনুপ্রাণিত হয়েছে বলে মনে করা হয়। কারণ তার প্রমাণ মেলে মধ্যভাগে বিশাল ১টি গম্বুজ ও ২ পাশে তার ছড়িয়ে যাওয়া দালানগুলোর ১টা মসজিদের অবয়ব থেকে। তবে রাজবাড়ী যেই দিক থেকে বাংলাদেশের অন্য প্রাসাদগুলার থেকে আলাদা তা হল এর বিশেষ সিঁড়িগুলো। সর্বমোট একত্রিশটি সিড়ি আছে যার প্রতিটাই ইতালীয় ঘরানার মার্বেল পাথরে তৈরি। সিঁড়ি থেকে উঠে জাদুঘর পর্যন্ত মেঝের পুরোটাও ইতালীয় ঘরানার পাথরে তৈরি। রাজবাড়ির পশ্চাৎভাগে গোপন সিঁড়ি রয়েছে। এই গোপন সিঁড়ি কোন একটি সুড়ংগের সঙ্গে যুক্ত যা সরাসরি ঘাঘট নদীর সঙ্গে যুক্ত এমন একটা কথা শোনা যায়। কিন্তু বর্তমানে সিঁড়িটা নিরাপত্তা জনিত কারণে বন্ধ করে দেওয়া আছে। শোনা যায় আছে রাণীর জন্যেই বিশেষ করে নির্মাণ করা হয়েছিল।

বন্ধ-খোলার সময়সূচী

গ্রীষ্মকালে সকাল দশটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত জমিদার বাড়ি খোলা থাকে। মাঝখানে দুপুর একটা থেকে দেড়টা পর্যন্ত আধ ঘণ্টার জন্যে বন্ধ থাকে। আর শীতকালে সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকে। শীতকালেও একটা থেকে দেড়টা পর্যন্ত আধ ঘণ্টার জন্যে বন্ধ থাকে। শুক্রবারে জুম্মার নামাযের জন্যে সাড়ে ১২ টা থেকে ৩ টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে। রবিবার সাধারণ ছুটি এবং সোমবার বেলা দুইটা থেকে খোলা থাকে। এছাড়াও সরকারী কোন বিশেষ দিবসে জাদুঘর বন্ধ থাকে ।

যেভাবে যাওয়া যায়

ঢাকা হতে রংপুর বাসে যেতে হবে। এজন্য টি আর ট্রাভেলস,গ্রীন লাইন, শ্যামলী পরিবহন, নাবিল পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজসহ বেশ কিছু বাস সার্ভিস রয়েছে। শ্রেণিভেদে পাঁচশত হতে এগারোশত টাকা ভাড়া লাগবে। বাস থেকে নেমে খুব সহজেই রিক্সা বা অটোতে করে তাজহাট জমিদার বাড়ি যাওয়া যাবে।

এছাড়া ঢাকা-রংপুর রেল যোগাযোগ মাধ্যম হিসাবে রংপুর এক্সপ্রেস যা ঢাকা থেকে রংপুরের উদ্দেশ্যে ছাড়ে সকাল নয় টা দশ মিনিটে এবং রংপুর পৌঁছায় সাতটা পাঁচ মিনিটে। তবে সোমবার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে।

খাওয়ার ব্যাবস্থা

রংপুর শহরে থাকার জন্য বেশকিছু মানসম্মত আবাসিক হোটেল রয়েছে যেমন- হোটেল দি পার্ক, হোটেল গোল্ডেন টাওয়ার, হোটেল তিলোত্তমা, হোটেল শাহ আমানতসহ আরও অনেক। এছাড়া খাবারের জন্যেও রয়েছে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ও হোটেল।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
100 %
খালেদা জিয়া অসুস্থ: মির্জা ফখরুল Previous post পূবের ২ শর্ত অনুযায়ী খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বেড়েছে
টাঙ্গাইলে ৩ জনকে হত্যার ঘটনায় মামলা Next post আপত্তিকর দৃশ্য দেখার কারণে বন্ধুর হাতে প্রাণ গেল জিয়াবুরের