দোয়া হচ্ছে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে কল্যাণ কামনা এবং আনুগত্য প্রকাশের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। এর মাধ্যমে খুব সহজেই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়।
লা ইলাহ ইল্লাল্লাহ, লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাল্লাহ বিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন, সুবহানাল্লাহ, আল হামদুলিল্লাহ- ইত্যাদি তাসবিহ, দোয়া-কালামগুলো বিপদ-আপদ মুক্তির পথ প্রদর্শক এর ভূমিকা পালন করে থাকে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে পবিত্র কোরআনে নির্দেশ প্রদান করেছেন, বিপদ-আপদে ধৈর্য্য ধারণ করতে এবং নামাজ আদায়ের মাধ্যমে তার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করতে।
সুতরাং বিপদের সময় বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করা, নফল রোজা রাখা, সূরা ফাতেহা পাঠ করা, দুরূদ শরীফ পাঠ করা, কোরআন তেলাওয়াত করা, দোয়ায়ে ইউনূছ প্রভৃতি পাঠ করা উত্তম।
বিপদের সময় বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করলে বিপদ থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। বিপদাপদ মানবজীবনের অংশবিশেষ। তাই বিপদ দেখে না ঘাবড়িয়ে ধৈর্য্যধারণ করতে হবে এবং নিজেকে আল্লাহর হাওলায় সোপর্দ করে দিতে হবে।
এই দোয়াটি বিপদ মসিবত থেকে বাঁচতে পাঠ করা যেতে পারে –
দোয়া: ” ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি ওয়া আখলিফ-লি খাইরাম মিনহা “
অর্থ: আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমাদেরকে তারই দিকে ফিরে যেতে হবে। হে আল্লাহ! বিপদে আমাকে সওয়াব দান করুন এবং যা হারিয়েছি তার বদলে তার চেয়ে ভালো কিছু দান করুন। – সহিহ মুসলিম
অন্য আরেক হাদিসের ইরশাদ মতে , হজরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বিপদের সময় এই দোয়াটি পাঠ করতেন-
দোয়া: “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালিমুল হাকিম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুল আরশিল আজিম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি- ওয়া রাব্বুল আরশিল কারিম “
অর্থ: আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই, তিনি পরম সহিষ্ণু ও মহাজ্ঞানী। আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই, তিনি মহান আরশের প্রভু। আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্যনেই, তিনি আকাশমন্ডলী, জমিন ও মহাসম্মানিত আরশের প্রভু। – সহিহ বোখারি ও মুসলিম
হজরত সা’দ ইবনে আবি ওক্কাস রা: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মরফু সূত্রে বর্ণনা করেন যে, মাছের পেটে থাকা অবস্থায় হজরত ইউনুস আলাইহিস সালামের দোয়া ছিল, লা-ইলাহা ইল্লা….।
যে কোনো প্রয়োজনে কোনো মুসলমান যদি এই দোয়া পড়ে তার প্রতিপালককে ডাকে তাহলে অব্যশই আল্লাহ তায়ালা তার ডাকে সাড়া দেবেন। [তিরমিজি-৩৫০৫, সুনানে কাবুরা-১০৪৯২, মুসনাদে আহমদ-১৪২ ও রূহুল মাআনি-৮/১০৯]
ইবনে জারির তাবারি রহ: একটি মরফু হাদিসে নকল করেন, আল্লাহর একটি নাম আছে, যে নামটি নিয়ে কেউ দোয়া করলে তা কবূল করা হয়, এবং এই নামের উছিলায় কিছু চাওয়া হলে তা দেয়া হয়, তা হলো দোয়ায়ে ইউনুস।
হজরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রা: বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম ইয়া রসূলাল্লাহ! এই দোয়াটি কি হজরত ইউনুস আলাইহিস সালামেরই বৈশিষ্ঠ্য নাকি সব মুসলমানের জন্যই? তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি পড়নি, ونجينه من الغم وكذلك ننجى المؤمنين (অর্থাৎ আমি তাকে চিন্তা থেকে মুক্তি দিয়েছি আর আমি এভাবেই মুমিনদেরকে মুক্তি দিয়ে থাকি।) অতএব যে কোনো ব্যক্তিই এইভাবে দোয়া করবে আল্লাহ তায়ালা সে দোয়া কবূল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বাতাস যখন ভয়াবহ রূপ ধারণ করত তখন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর চেহারা মোবারক বিবর্ণ হয়ে যেত। তিনি এ ভয়াবহ ঝড়ো-হাওয়ার ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকতে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করতেন।
হজরত আয়েশা (রা:) বলেন, যখন প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া শুরু হতো তখন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা:) এ দোয়া পড়তেন-
দোয়া: “আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরা মা ফিহা ওয়া খাইরা মা উরসিলাত বিহি; ওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহা ওয়াশাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা উরসিলাত বিহি।” – সহিহ বোখারি ও মুসলিম
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে এর ভালো দিকটির প্রতি, এতে যে কল্যাণ রয়েছে এবং একে যে উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে তার ভালো দিকটি প্রার্থনা করছি এবং আমি তোমার কাছে এর মন্দ দিকটি থেকে, এর মধ্যে যে অকল্যাণ রয়েছে, তা থেকে এবং এটা যে উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে তার মন্দ দিক থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।
এএফ / আরসিএন ২৪ বিডি /জানুয়ারি ১৪, ২০২০
আপডেট: ২০২০-০১-১২ / ৯.১০ পিএম