October 13, 2024
পর্তুগাল যাচ্ছেন হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান কাকলী

পর্তুগাল যাচ্ছেন হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান কাকলী

Read Time:7 Minute, 4 Second

মেয়ে মানুষের কিসের ফুটবল খেলা। তাও আবার ছোট প্যান্ট আর গেঞ্জি পরিয়া। লাজ লজ্জা সব উঠে গেল। কি যুগ আসিল সব ভূলে গেল মাইলা (মেয়ে)।

এইরকম সমাজের নানান জনের নানা কটু কথা প্রতিনিয়ত শুনার লাগতো। সাথে আড় চোখে মানুষের তাকানো, আড়ালের কটু কথা। মানুষের যেন নিত্য দিনের কাজ হয়ে দাড়িয়ে ছিল এটি। তবে থেমে থাকেননি। মানুষের কটু কথা থামাতে পারেনি সফলতার পথচলা।

ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল রাঙাটুঙ্গী ইউনাইটেড মহিলা ফুটবল একাডেমীর সদস্য কাকলী আক্তার। সম্প্রতি দেশের গন্ডি পেরিয়ে বাইরের দেশে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে সে।

৩ মাস ফুটবল খেলার প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য পর্তুগাল যাচ্ছে কাকলী। এ নিয়ে এলাকাজুড়ে আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে তার এমন সাফল্যতে বাহবাহ জানাচ্ছে সুশিল সমাজ।

রাণীশংকৈল পৌরসভার ০৮ নং ওয়ার্ডের আবুল কাশেম ও বানেসার মেয়ে কাকলী আক্তার (১৬)। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট সে।

নিজস্ব বসতভিটা ছাড়া আবাদি কোন জমি নেই কাকলীদের। ঋণের টাকায় একটি ভ্যান কিনেন তার বাবা। সেই ভ্যান চালিয়ে যা আয় হত তা দিয়েই চলতো ভরণপোষণ। আয়ের তুলনায় পরিবারের চাহিদা বেশী থাকতো তাদের। তবে কিছুই করার ছিলনা। উপার্জন আসার কোন রাস্তা ছিলনা তাদের। যা হত কষ্ট করে নিজের সংসার চালিয়ে নিতেন কাকলীর মা বানেসা।

দিন আসতো দিন যেত অভাব যেন দূর হতোনা কাকলীদের। তার মা বানেসা নিজের কাছে জমানো কিছু টাকা দিয়ে শুরু করেন চা বিক্রি।

রাস্তার ধারে ছোট একটি দোকানে চা বিক্রি করেই পরিবার ও কাকলীর অর্থের যোগান দিয়েছেন তিনি। বর্তমানে অসুস্থ বয়োবৃদ্ধ বাবা চালান ভ্যান আর মা করে যাচ্ছেন চা বিক্রি। তবে মেয়ের দেশের বাইরে যাওয়ার কথা যেন সব কষ্ট ভূলিয়ে রেখেছে তাদের পরিবারকে।

কাকলীর মা বানেসা বলেন, মেয়েডা আমার ফুটবল খেলে। নানান জনে নানা ধরনের খারাপ কথা কহে। খারাপ লাগিলেও মেয়েডা কান্নাকাটি করতো আবার যাইতো খেলতে। নিজস্ব থাকবার জায়গা ছাড়া আর আমাদের কিছু নাই। স্বামী ভ্যান চালায় আর আমি চা বিক্রি করি। এখন আমার মেয়েডা বাইরের দেশত যাচ্ছে এটা গর্বের বিষয়। সবাই দোয়া করবেন তার জন্য।

কাকলীর বাবা আবুল কাশেম বলেন, আমি দিনমজুরি করে সংসার চালাতাম। পরে একটা ভ্যান নিয়ে ভ্যান চালানো শুরু করি। এখনো ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাই। আর কাকলীর মা চা বিক্রি করে।

আমি বয়সের কারনে নানারোগে ভুগি। পায়ের সমস্যা লেগেই আছে। মেয়েটা পর্তুগাল যাচ্ছে প্রশিক্ষণে এটি আমার কাছে অনেক আনন্দের। যেখানে যায় সেখানকার লোকজন খোঁজ খবর নেই। চা খাওয়ায় আর কাকলীর গল্প করে। তখন বুকটা ভরে উঠে। আমার মেয়ের জন্য সকলে দোয়া রাখবেন।

কাকলী আক্তার বলেন, স্কুল পর্যায়ে যে বঙ্গমাতা ফুটবল খেলাগুলো হত সেখান থেকেই আমার যাত্রা শুরু। পরে আমার এক স্যার বললেন আমি ফুটবলার হবো কি না। আমি বলেছিলাম যদি ভাল সুযোগ পাওয়া যায় তাহলে হবো। পরে তিনি আমাকে রাঙাটুঙ্গিতে যোগাযোগ করিয়ে দেন।

আমি বাবা মাকে বিষয়টি বলি। তারা আমাকে সহযোগিতা করেছেন এবং ফুটবল কিনে দিয়েছেন। পরে আমি এখানেই অনুশীলন করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় খেলেছি। এখন দেশের বাইরে যাচ্ছি আরো উন্নত মানের প্রশিক্ষণের জন্য।

এটি আসলে অনেক বড় আনন্দের খবর আমার কাছে। তবে এ আনন্দের পিছনে অনেক পরিশ্রম রয়েছে। মেয়ে হিসেবে ফুটবল খেলতে এসে নানা ধরনের কটু কথা শুনতে হয়েছে। এলাকার মানুষ নিজস্ব আত্মীয় স্বজন কটু কথার মাধ্যমে আমাকে বারংবার আঘাত করেছে।

তবে সেই কষ্ট দূর হয়ে গেছে। দেশের বাইরে গিয়ে ফুটবলকে আরো রপ্ত করতে চাই। জীবনের স্বপ্ন গুলোর মধ্যে একটি স্বপ্ন হল কখনো বড় কিছু হলে রাঙাটুঙ্গি মাঠকে উন্নত করব ইনশাআল্লাহ।

রাঙাটুঙ্গি ইউনাইটেড মহিলা ফুটবল একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক তাজুল ইসলাম বলেন, অনুর্ধ-১৭ জাতীয় চাম্পিয়ানশীপ যারা হয়েছে তারা বাংলাদেশ যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ১১ জন ছেলে ব্রাজিলে ও ১১ জন মেয়ে পর্তুগালে ফুটবল প্রশিক্ষণের জন্য যাচ্ছে।

বেষ্ট এগারোর মধ্যে আমাদের ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে একজন নির্বাচিত হয়েছেন। একজন মেয়ে হয়ে সমাজের নানা কথা ও প্রতিকূলতা কাটিয়ে আজকে সে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বাইরে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি কাকলী আক্তার উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশের সুনাম বয়ে নিয়ে আসবে।

রাণীশংকৈল পৌরসভার মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমার পৌরসভার এক হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান কাকলী। আজকে সে ফুটবলের উচ্চ প্রশিক্ষণের জন্য পর্তুগাল যাচ্ছে। এটি আমাদের পৌরসভার জন্য একটি খুশির খবর। তার জন্য সবসময় শুভ কামনা থাকবে।

আরসিএন ২৪ বিডি / ৩ জুন ২০২২

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Average Rating

5 Star
0%
4 Star
0%
3 Star
0%
2 Star
0%
1 Star
0%

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

৩ দিনেও বাংলাদেশির লাশ ফেরত দেয়নি বিএসএফ Previous post লালমনিরহাটে বিএসএফের পিটুনিতে বাংলাদেশি আহত
রংপুরে অনার্স প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত Next post রংপুরে অনার্স প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত