
বিয়ের ৬ দিনের মাথায় স্কুলছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার
রংপুর জেলার কাউনিয়ায় মোছাঃ সুমাইয়া আকতার সোমা (১৭) নামে এক স্কুলছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।গতকাল মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) সন্ধ্যায় কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ পৌর এলাকার প্রামানিকপাড়া ভেল্লুটারী গ্রামে নিজ বাড়ির ঘর থেকে ওই কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মোছাঃ সুমাইয়া আকতার সোমা ওই গ্রামের মোঃ টুটুল মিয়া কন্যা এবং ধুমেরকুটি হায়দারীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী।
নিহত সুমাইয়ার পরিবার ও স্বজনা আমাদের জানান, এক বছর ধরে হারাগাছ পৌর এলাকার প্রামানিকপাড়া ভেল্লুটারী গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে মোঃ হৃদয় মিয়ার (২২) সাথে সুমাইয়ার প্রেমের সর্ম্পক গড়ে ওঠে। গত বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) দিবাগত রাতে স্থানীয় নিকাহনামা রেজিস্ট্রারের বাড়িতে হৃদয় এবং সুমাইয়ার বিয়ে হয়। হৃদয়ের ভগ্নিপতি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল। বিয়ে রেজিস্ট্রির পর হবু বর হৃদয় কনের বাড়িতে যাতায়াত করে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সুমাইয়াকে ফোন করে হৃদয়। ২জনের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ কথা হয়। হৃদয়ের সাথে কথা বলার পর সুমাইয়া মনমরা হয়ে ফোন রেখে বাড়ির বাহিরে বের হয়। এরপর বিকেলে ঘরের ভেতর সুমাইয়াকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায় তার মা। চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে সুমাইয়ার মরদেহ উদ্ধার করে।
নিহত সুমাইয়ার মা মোছাঃ মনিরা বেগম জানান, আমার মেয়ে সকাল থেকে হাসিখুশি ছিল। দুপুরে হৃদয়ের সাথে কথা বলার পর আমার মেয়ে মনমরা হয়ে যায়। হৃদয়ের এমন কিছু কথায় মেয়েটা মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে আত্মহত্যা করতে পারে। এ জন্য হৃদয়ের বাবা-মা এবং পরিবারের লোকজনরাই দায়ী। তারা বিয়ে অস্বীকার করতে হৃদয়কে চাপ প্রদান করতো। আমার মেয়ে মরে গেছে, আমি এদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
নিহত সুমাইয়ার বাবা মোঃ টুটুল মিয়া জানান, আমার মেয়ে ও হৃদয়ের কাবিননামায় রেজিস্ট্রারি হলেও তাদের বিয়ে পড়ানো হয়নি এখনও। হৃদয়ের পরিবার যৌতুক এবং স্বর্ণালঙ্কার ছাড়া মেয়েকে ঘরে তুলবে না বলে জানায়। হৃদয়ের কারণে আমার মেয়েটা না ফেরার দেশে চলে গেল। আমি এদের দৃষ্ঠান্তমূলক বিচার চাই। গতকাল মঙ্গলবার রাতে হৃদয় ও তার পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু থানা পুলিশ অপমৃত্যু মামলা নিয়েছে।
হারাগাছ পৌরসভার কাউন্সিলর মোঃ মাসুদার রহমান জানান, শুনেছি ছেলে ও মেয়েটির প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ছেলের পরিবার বিষয়টি মেনে না নেওয়ায় মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে বলে স্বজনরা জানিয়েছে।
হারাগাছ থানা পুলিশের উপ-পরির্দশক (এসআই) কমল মোহন্ত বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থানে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করি। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য রাতেই রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছি। নিহতের পরিবার, স্বজন এবং আশপাশের লোকজনের ভাষ্য অনুযায়ী মেয়েটি মানসিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যা করতে পারে। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে প্রকৃত কারণটি জানা যাবে।
রংপুর মেট্টোপলিটন হারাগাছ থানা পুলশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মোজ্জামেল হক বলেন, ওই কিশোরীর আত্মহত্যায় কারো প্ররোচনা আছে কিনা তা আমরা খতিয়ে দেখবো। তবে এ ব্যাপারে ১টি অপমৃত্য মামলা হয়েছে।