নীলফামারীতে স্ত্রী-মেয়েকে হত্যার ঘটনায় ঘাতকের স্বীকারোক্তি
আলোচিত স্ত্রী ও দুই মেয়ে সন্তানকে হত্যার পর নিজে আত্মহত্যার চেষ্টাকারী ঘাতক মোঃ আশিকুল হক মোল্লাকে (৪০) দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
কারাগারে প্রেরণের আগে তিনি গত রবিবার (৩১ মার্চ) দুপুরে নীলফামারীর চীফ জুডিশিয়াল আদালতের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শাহীন কবিরের নিকট স্ত্রী এবং দুই সন্তানকে শ্বাসরোধ করে হত্যার ঘটনা ও নিজে আত্মহত্যার চেষ্টার বিষয় শিকার করে ১৬৪ ধারা জবানবন্দী প্রদান করে।
সেখানে সে জানায়, ব্যবসায়ে ১৮ লক্ষ টাকা ঋণগ্রস্থ্য ও পাওনাদারের চাপে সে স্ত্রী ও দুইসন্তানকে হত্যার পরে নিজে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এজন্য সে দীর্ঘ ১০ দিন ইউটিউব চ্যানেলে বিভিন্ন ভিডিও দেখে এই হত্যার পরিকল্পনা করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর থানার ওসি মোঃ তানভীরুল ইসলাম পিপিএম।
পুলিশ জানায়, চলতি বছরের গত ২ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে নীলফামারী সদর উপজেলার চড়াইখোলা ইউনিয়নের দারোয়ানী বন্দর বাজার এলাকার নিজ বাড়িতে আশিকুল হক মোল্লা তার স্ত্রী মোছাঃ তহুরা বেগম (৩০), তাঁর মেয়ে মোছাঃ আয়েশা সিদ্দিকা তানিয়া (১১) ও মোছাঃ জারিন তান্নিম (৬) কে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। স্ত্রী সন্তানকে হত্যার পর আশিকুল নিজে গলা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করলে স্থানীয়রা নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে গুরুতর আহত অবস্থায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করে। এই ঘটনায় নিহত তহুরার ভাই আসাদুজ্জামান নূর আসাদ বাদি হয়ে আশিকুল মোল্লার নামে সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে।
ওসি জানান, ওই ঘটনায় ঘাতক বাবা মোঃ আশিকুল হক মোল্লা প্রায় ২ মাস রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। সেখানে সে পুলিশ পাহারায় ছিল। গত শনিবার (৩০ মার্চ) বিকালে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র প্রদান করলে সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করে নীলফামারী সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়। রবিবার দুপুরে আদালতে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শাহীন কবির আদালতে প্রদান করলে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার ১৬৪ ধারা জবানবন্দীতে শিকার করে আশিকুল। এরপর আদালত তাকে জেলা কারাগারে প্রেরণ করে।
প্রতিবেশি ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আশিকুল হক মোল্লা খুব শান্ত স্বভাবের মানুষ ছিল। তিনি শারীরিকভাবেও কিছুটা অসুস্থ্য ছিলেন। তার স্ত্রী ও সন্তানরা ছিল পর্দানশীল। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া তারা বাড়ি থেকে বেড় হতো না। পর্দার কারনে স্বজনদের অনেকে আশিকুলের স্ত্রীর মুখ দেখেননি। তিনি পর্দার আড়ালে থেকে কথাবার্তা বলতেন। আশিকুল হক ঋণগ্রস্ত থাকার কথা এর আগেও অনেককে জানিয়ে ছিলেন।
আশিকুল হক মোল্লার মামাতো ভাই ও নিকট প্রতিবেশি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম (৪১) বলেন, ঘটনার প্রায় ১ মাস আগে সে মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের ঔষধ খেয়েছিল। তখন তাকে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ঘটনার প্রায় ৩ থেকে ৪ মাস আগে সৈয়দপুরে মানসিক চিকিৎসক মোঃ রফিকুল ইসলামের কাছে নিয়ে তার চিকিৎসা করানো হয়। এর অনেক আগে থেকে সে রংপুরের এক মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসা নিচ্ছিল।